ভাই মরল রংপুরে সেই
রংপুরই তো বাংলাদেশ
নুসরাতেরা আগুন দিল
দোজখ যেন ছড়ায় কেশ।
কওমি তরুণ দাঁড়ায়া ছিল
কারবালারই ফোরাতে
শাহাদাতের আগুন দিয়া
খুনির আরশ পোড়াতে।
পোলা গেছে মাইয়া গেছে
দুয়ার খুইলা রাখছে মায়
ভাই-বইনে আইছে ফিরা
রক্তভেজা খাটিয়ায়।
মরা পুতরে কোলে নিয়া
মা ফিরছে অটোতে
রোজ পোলারে খোঁজে অহন
আইডি কাডের ফটোতে।
চক্ষু দিল পা-ও দিল
সারা বাংলায় কাফন শ্যাষ
গোরস্থানে কান্দে শহিদ-
পঙ্গু যেন হয় না দ্যাশ।
মায়ের ওড়না বাইন্ধা মাথায়
পুত মিছিলে হারাইল প্রাণ
ঘাস কান্দে গাছ কান্দে কান্দে
বাঁশের গোরস্থান।
খোদার আরশ কাঁইপা ওঠে
শুইনা বাপের হাহাকার
একটা মানুষ মারার লাগি
কয়টা গুলি লাগে ছার?
লাশের ভিতর লাশ ডুইবা যায়
রাতের হাওয়ায় কিসের লাল
সারা আকাশ ছাইয়া আছে
কোন শহিদের গায়ের শাল?
চিরকালই স্বাধীনতা
আসে এমন রীতিতে
কত রক্ত লাইগা আছে
বাংলাদেশের সিঁথিতে।
শাহাদাত - শহিদ হওয়া; ধর্ম, ন্যায় ও সত্য রক্ষার বা প্রতিষ্ঠার কাজে নিহত হওয়া।
আরশ - সর্বব্যাপী খোদার আসন।
খাটিয়া - ক্ষুদ্র খাট, সাধারণত যা দড়ি দিয়ে ছাওয়া হয়।
আইডি কার্ড - পরিচয়পত্র।
গোরস্থান - কবরস্থান; সমাধিক্ষেত্র।
সিঁথি - মাথার চুল দুইভাগে বিন্যস্ত করে যে সরু রেখা সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলনের পরিক্রমায় 'জুলাই ২০২৪'-এ মর্ম অনুধাবন করতে পারা।
হাসান রোবায়েতের 'সিঁথি' কবিতায় সাম্প্রতিক বাংলাদেশের এক নির্মম ও মর্মন্তুদ অভিজ্ঞতার প্রকাশ ঘটেছে। শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থান ২০২৪-এ বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশের মানুষ নতুনভাবে মুক্তির স্বাদ পেয়েছে; কিন্তু অগণিত মানুষের আত্মদানের বিনিময়ে রচিত হয়েছে সে মৃত্যুর গাথা। শাসকপক্ষের মরণ-কামড় উপেক্ষা করে প্রাণ দিয়েছে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা। মুখের ভাষার উচ্চারণরীতি আর বাগবিধি ব্যবহার করে কবি এক রক্তস্নাত বাংলদেশের অন্তরঙ্গ ছবি এঁকেছেন। তাতে দেশের কল্যাণ আর মানুষের মুক্তির প্রত্যয়ও ঘোষিত হয়েছে। কবিতাটিতে বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪-এর অভ্যুত্থান এক নতুন বিজয়গাথা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
হাসান রোবায়েত ১৯৮৯ সালের ১৯ই আগস্ট বগুড়া জেলার সোনাতলা থানার অন্তর্গত পশ্চিম তেকানী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং মায়ের নাম ফারহানা রহমান। তিনি বগুড়ার পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সরকারি আজিজুল হক কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। উল্লেখযোগ্য কবিতার বই 'মীনগন্ধের তারা', 'মাধুডাঙাতীরে', 'মুসলমানের ছেলে', 'ছায়াকারবালা' ইত্যাদি। 'মেঘের ভিতর হরিণ ঘুমায়' তাঁর কিশোর কবিতার বই।
ক. 'সিঁথি' কবিতাটিতে যেসব আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তার একটি তালিকা কর।
খ. তোমার শ্রেণিতে কবিতাটি আবৃত্তির জন্য একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন কর। (শিক্ষকের সহায়তায়)
১. গোরস্থান শব্দের অর্থ কী?
ক. জীবনাবসান
খ. সমাধিক্ষেত্র
গ. দোজখ
ঘ. বাঁশঝাড়
২. 'চিরকালই স্বাধীনতা
আসে এমন রীতিতে'- কথাটির অর্থ কী?
ক. স্বাধীনতা অর্জন সহজ নয়
খ. স্বাধীন দেশের মানুষ হওয়া
গ. স্বাধীনতা অর্জনের পথে অনেক চড়াই-উৎরাই থাকে
ঘ. স্বাধীনতা বড়ই সুখকর বিষয়
উদ্দীপকটি পড়ে ৩ ও ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও।
মূর্তি (২) নাম বললে চিনতে পারবেন না। হাইকোর্টের কেরানি ছিলাম। তখন টের পাইনি। ফুসফুসের ভেতর দিয়ে চলে গিয়েছিল। এপিঠ-ওপিঠ। বোকা ডাক্তার খামোখা কেটেকুটে গুলিটা খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়েছে। জমাট রক্তের মধ্যে ফুটো নজরেই পড়েনি প্রথমে।
নেতা : তুমিও এই দলে এসে জুটেছ নাকি?
মূর্তি (২): গুলি দিয়ে গেঁথে দিয়েছেন। ইচ্ছে করলেও আল্ল্গা হতে পারব না।
৩. সংলাপটিতে সিঁথি কবিতার যে দিকটি ফুঁটে উঠেছে, তা হলো-
i. অন্যায়ের প্রতিবাদে আত্মদান
ii. বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
ন্যায়-অন্যায়ের কোনো পার্থক্য নাই
নিচের কোনটি সঠিক
ক. i
খ. ii
গ. i ও ii
ঘ. i, ii ও iii
৪. সংলাপের মূলভাব নিচের কোন চরণে পাওয়া যায়?
ক. একটা মানুষ মারার লাগি কয়টা গুলি লাগে ছার
খ. কওমি তরুণ দাঁড়ায়া ছিল কারবালারই ফোরাতে
গ. খোদার আরশ কাঁইপা ওঠে শুইনা বাপের হাহাকার
ঘ. সারা আকাশ ছাইয়া আছে কোন শহিদের গায়ের শাল
প্রথম অংশ
তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা
তোমাকে পাওয়ার জন্যে
আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায়?
আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন?
দ্বিতীয় অংশ
সেই তেজী তরুণ যার পদভারে
একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম হতে চলেছে -
সবাই অধীর প্রতীক্ষা করছে তোমার জন্যে, হে স্বাধীনতা।
ক. শাহাদাত বলতে কী বোবা?
খ. 'গোরস্থানে কান্দে শহিদ-পঙ্গু যেন হয় না দ্যাশ।' এখানে কীসের আশঙ্কা ব্যক্ত হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের প্রথম অংশটিতে 'সিঁথি' কবিতায় ছাত্র-জনতার আত্মদানের বিষয়টি কীভাবে ফুটে উঠেছে তা বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের দ্বিতীয় অংশটি 'সিঁথি' কবিতার মূল বক্তব্য। -ব্যাখ্যা কর।
common.read_more